ইসলামের প্রতিটি কাজ নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে আদায় করতে হয়। হজ আদায়েরও নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। নিম্নে হজ পালনের নিয়মাবলি ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হলো :
ইহ্রাম : ইহরাম আরবি শব্দ। এর অর্থ নিষিদ্ধ। নামাযের উদ্দেশ্যে যেমন তাহরিমা বাঁধতে হয়, হজের জন্যও তেমনি ইহ্রাম বাঁধতে হয়। এটি হজের আনুষ্ঠানিক নিয়ত । শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখ থেকে জিলহজ মাসের ৯ তারিখ পর্যন্ত যেকোনো দিন ইহরাম বাঁধা যায়। এ সময় ছাড়া অন্য সময় ইহরাম বাঁধলে হবে না। এ সময় ইরামের পোশাক পরবে ও কিবলামুখী হয়ে সরবে তালবিয়া পাঠ করবে । হজ মৌসুম ছাড়া অন্য সময় যদি কেউ কাবাঘর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে মক্কা গমনের ইচ্ছা করে তবে তাকেও হজের ইহরাম বাঁধার স্থানে (মিকাতে) পৌঁছে ইহ্রাম বাঁধতে হবে।
তাওয়াফে কুদুম (আগমনি তাওয়াফ)
ইহ্রাম বাঁধার পর মক্কা পৌঁছে কাবাঘরের চারধারে তাওয়াফ করতে হয়। অর্থাৎ সাতবার ঘুরতে হয়। মক্কা শরিফ পৌছার পর এটি প্রথম তাওয়াফ। এ কারণে একে তাওয়াফে কুদুম বা আগমনি তাওয়াফ বলা হয়। হাজরে আসওয়াদ হতে তাওয়াফ শুরু করতে হয়।
ইহ্রাম বাঁধার পর মক্কা পৌঁছে কাবাঘরের চারধারে তাওয়াফ করতে হয়। অর্থাৎ সাতবার ঘুরতে হয়। মক্কা শরিফ পৌছার পর এটি প্রথম তাওয়াফ। এ কারণে একে তাওয়াফে কুদুম বা আগমনি তাওয়াফ বলা হয়। হাজরে আসওয়াদ হতে তাওয়াফ শুরু করতে হয়।
তাওয়াফে কুদুম (আগমনি তাওয়াফ)
ইহ্রাম বাঁধার পর মক্কা পৌঁছে কাবাঘরের চারধারে তাওয়াফ করতে হয়। অর্থাৎ সাতবার ঘুরতে হয় । মক্কা শরিফ পৌছার পর এটি প্রথম তাওয়াফ । এ কারণে একে তাওয়াফে কুদুম বা আগমনি তাওয়াফ বলা হয়। হাজরে আসওয়াদ হতে তাওয়াফ শুরু করতে হয়।
সাঈ : আগমনি তাওয়াফ শেষ করে কাবাঘরের অনতিদূরে অবস্থিত সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝের পথটি সাতবার অতিক্রম করতে হয়। একে বলা হয় সাঈ। সাফা পাহাড় থেকে সাঈ শুরু করে মারওয়া পাহাড়ে শেষ করতে হয়।
তারপর ইহরাম অবস্থায় জিলহজ মাসের সাত তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এ সময়ের মধ্যে যতবার ইচ্ছা তাওয়াফ করা যায় এগুলো নফল তাওয়াফ। সাঈ করার প্রয়োজন নেই ৷ নফল তাওয়াফে অনেক সাওয়াব পাওয়া যায়।
৭ই জিলহজ
এ তারিখে যোহর নামাযের পর ইমাম খুত্বা দেন । এ খুত্বায় তিনি হজ সম্পর্কীয় জ্ঞাতব্য বিষয় বিশেষ করে ৮ তারিখ মিনায় এবং ৯ তারিখ আরাফাতে করণীয় বা আকাম সম্বন্ধে প্রয়োজনীয় নিয়ম-কানুন বর্ণনা করেন।
৮ই জিলহজ
এ তারিখে হাজিগণ সূর্যোদয়ের পর মিনায় আসেন । মিনায় যাওয়ার পূর্বে সুন্নাত অনুযায়ী গোসল করে ও ইহরামের চাদর পরে ‘মসজিদুল হারাম' বা বাইতুল্লাহ্ শরিফে আসেন। ইহরাম ও নিয়তের সাথে সাথেই তালবিয়া পাঠ করতে করতে মিনায় যেতে হয় । সেখানে পরের দিন পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা সুন্নাত।
৯ই জিলহজ
নবম তারিখ আরাফার দিবস। এদিন সকালেই 'আরাফায় অবস্থানের' উদ্দেশ্যে মিনায় ফজরের নামায আদায় করে আরাফার ময়দানের দিকে রওয়ানা করতে হয়। এখানে ইমামের পেছনে যোহরের ওয়াক্তে যোহর ও আসর উভয় নামায একসঙ্গে আদায় করতে হয়। নামাযের পূর্বে ইমাম খুত্বা দেন । খুতবায় হজের বাকি বিধিবিধান বর্ণনা করেন। আরাফার ময়দানে অবস্থান হজের একটি ফরজ কাজ। ৯ তারিখ অথবা অনিবার্য কারণে ৯ তারিখের রাত পরবর্তী সুবহি সাদিকের পূর্বে কোনো সময়ে এক মুহুর্তের জন্য হলেও আরাফার মাঠে অবস্থান করতে হয় । অন্যথায় হজ হবে না। এদিন সূর্যাস্তের সাথে সাথে আরাফার মাঠ থেকে মুযদালিফায় ফিরে আসতে হয়। মুযদালিফায় পৌঁছে এশার নামাযের সময়ে মাগরিব ও এশা এক সঙ্গে আদায় করতে হয়। এ রাত মুযদালিফায় কাটাতে হয়।
১০ই জিলহজ
দশম দিন কুরবানির দিন। এদিন সকালে সূর্যোদয়ের পূর্বে হাজিগণ মিনার পথে রওয়ানা হয় । মিনার এক স্থানে শয়তানের প্রতিকৃতি হিসেবে পরপর তিনটি পাকা স্তম্ভ আছে । সেখানে পৌঁছে এদিন বড় শয়তানের প্রতিকৃতিকে লক্ষ্য করে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করতে হয় । কংকরগুলো ছোলা পরিমাণ বড় হতে হয় । হযরত ইব্রাহিম (আ.) যখন আল্লাহর ইঙ্গিতে প্রাণপ্রিয় একমাত্র পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কুরবানি করতে যাচ্ছিলেন, তখন শয়তান পিতা-পুত্রের মনে সংশয়ের সৃষ্টি করে তাঁদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়েছিল। তাঁরা বিরক্ত হয়ে শয়তানের প্রতি পাথর নিক্ষেপ করেছিলেন । আল্লাহর প্রতি তাঁদের ভালোবাসা ও নিষ্ঠার প্রতি সম্মান দেখিয়ে হাজিগণ এ পাথর নিক্ষেপ করে থাকেন।
কংকর নিক্ষেপের পর এ মিনাতেই কুরবানি করতে হয়। কুরবানির পর হাজিগণ মাথা কামিয়ে ইহ্রাম থেকে মুক্ত হন। চুল ছোট করলেও চলে, তবে সমস্ত মাথার চুল সমপরিমাপে কাটতে হয়। মেয়েদেরকে চুলের অগ্রভাগের কিছুটা কাটলেই চলে। তারপর ঐ তারিখেই অথবা ১১ কিংবা ১২ তারিখে মক্কা ফিরে কাবাঘর তাওয়াফ করতে হয় । এ তাওয়াফকে তাওয়াফে যিয়ারত বলা হয়। এটি হজের একটি ফরজ কাজ। মক্কায় প্রথম প্রবেশের সময় যদি সাফা ও মারওয়ায় সাঈ না করে থাকে তবে এ তাওয়াফের পর সাঈ করতে হয় । আগে করে থাকলে আর প্রয়োজন হয় না। তারপর মিনায় ফিরে যেতে হয় এবং সেখানেই ১১ ও ১২ তারিখ থাকতে হয়।
১১ ও ১২ তারিখ দুপুরের পর মিনার তিনটি স্তম্ভের প্রতিটিতে সাতটি করে কংকর মারতে হয় । তারপর ইচ্ছে করলে ১২ তারিখেই মক্কায় ফিরে আসতে পারেন । যদি কেউ মিনায় থেকে যান তবে তাঁকে ১৩ তারিখ দুপুরের পর তিনটি স্তম্ভে পাথর নিক্ষেপ করে মক্কায় ফিরতে হয়। এভাবে হজের কার্যাবলি সমাপ্ত করতে হয় । যারা বহিরাগত তাদের সর্বশেষ কাজ হচ্ছে বিদায়ী তাওয়াফ করা। একে ‘তাওয়াফুল বিদা' বা প্রত্যাবর্তনকালীন তাওয়াফও বলে । বহিরাগতদের জন্য এ তাওয়াফ ওয়াজিব।
হজের ত্রুটি ও তা সংশোধনের উপায়
হজ পালনকালে অনিচ্ছায়ও অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি বা নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটতে পারে। এই ত্রুটির কোনোটি গুরুতর আবার কোনোটি সাধারণ পর্যায়ের হয়ে থাকে। হজের ওয়াজিব পালনে ধারাবাহিকতার ব্যতিক্রম ঘটলে ‘দম’ ওয়াজিব হয় । যেমন : মাথা মুণ্ডনের পূর্বে শয়তানকে কংকর নিক্ষেপ করা। আর 'দম' হচ্ছে একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা কুরবানি করা। উট, গরু বা মহিষের এক-সপ্তমাংশও এর স্থলাভিষিক্ত হতে পারে । সাধারণভাবে ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজগুলো বা হারাম শরিফ এলাকায় নিষিদ্ধ কোনো কাজ করলে প্রতিকার স্বরূপ ‘দম’ বা কুরবানি করতে হয়। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাদাকা দিতে হয়।
কাজ : শিক্ষার্থীরা হজ পালনের ধারাবাহিক নিয়মগুলো সংক্ষিপ্ত শিরোনামে পোস্টারে লিখে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে। |
সাম্য ও বিশ্বভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় হজের ভূমিকা
হজ একান্তই ব্যক্তিগত ইবাদত । আল্লাহর প্রেমিক হাজিগণ আল্লাহর নৈকট্য ও ভালোবাসা লাভের জন্য হজ করে থাকেন । তা সত্ত্বেও সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে । বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা মুসলিম সম্প্রদায় হজের মৌসুমে বিশেষভাবে ধর্মীয় ও নৈতিক চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে উঠে । যাঁরা হজে যান তাঁদের মন ধর্মীয় চেতনায় উদ্দীপ্ত থাকে, অনুরূপভাবে যাঁরা তাঁদের বিদায় সম্ভাষণ জানাতে আসে, তাঁদের মধ্যেও ধর্মীয় চেতনাশক্তি জাগ্রত হয়। হাজিগণ যে স্থান দিয়ে গমন করেন, তাঁদের 'লাব্বাইক' ধ্বনি শুনে সেখানকার অনেক মানুষের মনও হজের প্রতি আগ্রহী হয়।
বিভিন্ন দেশ হতে আগত হাজিদের শারীরিক অবকাঠামো, ভাষা ও সংস্কৃতি ভিন্ন কিন্তু মিকাতের (ইহরাম বাঁধার স্থান) কাছে এসে একই ধরনের কাপড় পরিধান করে। সবার মুখে একই ধ্বনি প্রতিধ্বনিত করে আকাশ বাতাস মুখরিত করে তোলে মক্কা ও মদিনায় একত্র হয়ে একই ইমামের পেছনে নামায আদায় করে। সমবেত মুসলিম জনতা ভাষা, জাতি, দেশ ও গোত্রের কৃত্রিম বৈষম্য ভেঙে দিয়ে বিশ্বভ্রাতৃত্ব স্থাপনের বিরাট সুযোগ পায় । মানুষের মনে সাম্যের ধারণা জন্মায় । হজের এই মহাসম্মেলনে পৃথিবীর সব শ্রেণির মানুষই এসে সমবেত হয় । সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আদান-প্রদান ঘটে । ভাব বিনিময় হয়। বিশ্বশান্তি স্থাপনে এবং জাতিসমূহের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, কলহ মিটিয়ে ভালোবাসা, বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্ব স্থাপনের বিশেষ সুযোগ পায়। হজের এ শিক্ষা মানবসমাজে বাস্তবায়িত হলে, মানুষের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ, হানাহানি, মারামারি দূর হয়ে পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা, মমত্ববোধ ও সহনশীল দৃষ্টিভঙ্গি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সৃষ্টি হবে।
কাজ : ‘বিশ্বভ্রাতৃত্ব গড়ে উঠতে হজের সামাজিক শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।' শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে এ বিষয়ে বিতর্কের আয়োজন করবে । শিক্ষক মহোদয় বিচারকের ভূমিকা পালন করবেন। |
Read more